পাকিস্তান আমলে কষ্ট গেছে
নাম তাঁর চাঁনমিয়া সরদার। গ্রামের লোকেরা ডাকত চাঁন বলে। সাত ভাই তিন বোনের সংসারে তিনি চতুর্থজন। বাবার জমিজমা যা ছিল, তা দিয়েই চলে যেত সংসার। বড়াইকান্দি গ্রামের পাশেই যমুনার শাখা নদী। সে নদী ঘিরে কেটেছে তাঁর আনন্দ-হাসির শৈশব-কৈশোর।
মাছ ধরাতে চাঁন ছিলেন পটু। সবার মুখে মুখে তাঁর নাম। তাঁর হাতেই ধরা পড়ত বড় বড় আইড় মাছ। স্কুল থেকে ফেরার পথে ঠিক করে নিতেন কোন দিকে যাবেন। মাঝে মধ্যেই বন্ধু আইনাল, আকবর, কাজিমুদ্দিন, নান্নু মিয়া, মনসুর, শফিকুল, ফজলু ও সামাদের সঙ্গে দল বাঁধতেন। কই মারা জাল, সান্দি জাল, চরক জাল ও তৌরে জাল ছিল প্রিয়। প্রায়ই রাত কাটাতেন নৌকায়। মাঝে মাঝে বন্ধুদের সঙ্গে চাল, ডাল আর খাসি নিয়ে নৌকা ভাসাতেন। যমুনার বুকে ভাসতে ভাসতে চলে যেতেন অজানা কোনো চরে। রান্না করে খাওয়া আর হুল্লোড় করেই কাটিয়ে দিতেন রাতটা। নৌকায় ভেসে ভেসে আকাশের তারা গুণতেন চাঁন। ঢেউয়ের দোলায় দুলতে দুলতে হেঁড়ে গলায় গান গাওয়াতেই ছিল তাঁর আনন্দ।
যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ চাঁনমিয়া সরদারের শৈশবের দিনগুলো এভাবেই কেটেছে। বাড়ি তাঁর গাইবান্ধার শাঘাটা উপজেলার বড়াইকান্দি গ্রামে। বাবার নাম ঘুনু সরদার, আর মা আনোয়ারা খাতুন (তহমিনা)। চাঁনমিয়ার লেখাপড়ায় হাতেখড়ি পাচিয়ারপুর প্রাইমারি স্কুলে। পরে ভর্তি হন কামালের পাড়া হাই স্কুলে। ১৯৭১ সালে তিনি ছিলেন ওই স্কুলেরই ক্লাস নাইনের ছাত্র।
পাকিস্তানিদের শাসনের কথা উঠতেই মুক্তিযোদ্ধা চাঁনমিয়া বলেন:
‘‘‘তহন খানার ঘাটতি ছিল হেভি। আমরা কাওনের ভাত, খেরাচির ভাত খাইছি। সাড়ে সাত কোটি মানুষ তহন। কিন্তু তবুও খানায় খুব কষ্ট হইছে। এহন তো ষোল কোটি কিন্তু খানায় ঘাটতি নাই। তিনবেলা ভাত খেলিও তো শেষ অয় না। তহন আমরা একবেলা ভাত খাইতাম। দুইবেলা খাইতাম রুটি। অভাবে মানুষ নদীর শালুক তুইলা খাইত। ঘেচু শুয়োরে খায়। অথচ তহন সেগুলাও মানুষ তুইলা আইনা খাইত। পাকিস্তান আমলে কষ্ট গেছে… অনেক কষ্ট।’’
পূর্ব পাকিস্তান আর পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য কেমন দেখেছেন?
‘‘তহন রাজনীতি কারে কয় বুঝতাম না। বাড়ির পাশেই ছিল মহিমাগঞ্জ সুগার মিল। চিনি আমগো দেশে আমরা উৎপাদন করি, আর আমরাই খাই বেশি দামে, ওরা খায় কম দামে, এইসব শুনতাম। একবার বঙ্গবন্ধু মিটিং করতে আইছিল ইসলামিয়া স্কুলে। সে কইল বহু বৈষম্যের কথা। তার ভাষণ শুনলেই গায়ের লোম খাড়ায়া যাইত। তিনি খালি নেতা ছিলেন না, রাজনীতিরও পিতা তিনি।’’
১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। দেশ তখন উত্তপ্ত। চাঁনমিয়ারা খবর পান মুজাহিদ ট্রেনিংয়ের। বন্ধু সোলায়মান, মোহাম্মদ আলী, খায়রুলসহ যোগ দেন মুজাহিদে। ট্রেনিং হয় গাইবান্ধায়। এসডিওর বাড়ির পাশের আনসার ক্লাবের মাঠে।
চাঁনমিয়ার ভাষায়:
‘‘আমগো থ্রি নট থ্রি ও মার্কো অস্ত্র চালানো শিখায়। ট্রেনিং হয় এক মাস। আফতাব দুদু নামের এক আনসার কমান্ডার করান মুজাহিদ ট্রেনিংটি। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল ট্রেনিং নিয়াই চলে যাব। ওগো ট্রেনিং ওদের বিরুদ্ধেই কাজে লাগামু। এটাই ছিল আমাগো কল্পনা-জল্পনা।’’
মুজাহিদ ট্রেনিং চলাকালীন চাঁনমিয়া রেডিওতে শোনেন বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ। এ ভাষণ তাঁদের আরও উদ্দীপ্ত করে তোলে। তিনি বলেন:
‘‘বঙ্গবন্ধু কইলেন, ‘সাড়ে সাত কোটি মানুষকে আর দাবায়া রাখতে পারবা না। আমরা যখন মরতে শিখেছি, তখন কেউ আমাদের আর দমায়া রাখতে পারবা না… আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি…।’ এই কথা শুইনাই আমগো কাছে সব পরিষ্কার হইয়া গেল।’’
মুজাহিদ ট্রেনিং শেষে কী করলেন?
‘‘বাড়ি ফেরার কয়েক দিন পরেই আর্মি নামে। ওরা ক্যাম্প করে সুগার মিলে। অনেকেই তখন রাজাকার আর শান্তিবাহিনীতে যোগ দিল। আমাগো পাশেই ছিল নুরুল নামে একজনের বাড়ি। এক রাতে তার স্ত্রীরে ধইরা নিয়া যায় পাঞ্জাবিরা। তাদের সহযোগিতা করে রাজাকাররা। এইসব দেইখা ঠিক থাকতে পারি না। এপ্রিলের শেষের দিকের কথা। ভাগিনা আয়নাল, বাচ্চু মিয়া, কাজিমুদ্দিসহ আমরা ৫জন বাড়ি ছাড়ি। বাবা-মায়েরেও বইলা যাই নাই। দেশরক্ষার জন্যই আমরা মুক্তিযুদ্ধে গেছি।’’
ট্রেনিং নিলেন কোথায়?
‘‘আমাদের ওখান থাইকা পাটের নৌকা যাইত সরান্দবাড়িতে। ওখানের খুব কাছেই ছিল ভারতের মাইনকার চর। একরাতে আমরা পাটের নৌকায় কইরা বর্ডার পার হই। পরে মাইনকার চর হইয়া যাই তুরাতে। সেখানেই ট্রেনিং নেই ২২ দিনের।’’
কোথায় কোথায় যুদ্ধ করেছেন?
‘‘ট্রেনিং শেষে আমাদের পাঠানো হয় এগার নম্বর সেক্টরের সাব সেক্টরে। শাঘাটা, ফুলছড়ি ও গাইবান্ধায়। রুস্তম আলী খন্দকার ছিল গ্রুপ কমান্ডার। আমাদের ৩২ জনের দলের কমান্ড করতেন ২ নং প্লাটুনের কমান্ডার এনামুল হক। আমি ছিলাম গাইডম্যান। চালাতাম থ্রি নট থ্রি। সবাইরে সজাগ রাখা, বিভিন্ন বিষয়ে সিগনাল দেওয়া ছিল কাজ। মাঝে মাঝে রেইকিও করতে হইত। আমরা অপারেশন করি গাইবান্ধার ফুলছড়ি, দলদলিয়া, মহিমাগঞ্জ ব্রিজ, বাদিয়া খালি ব্রিজ, সিংড়া ব্রিজ এইসব স্থানে।’’
অপারেশনের ধরন সম্পর্কে জানা হল মুক্তিযোদ্ধা চাঁনমিয়ার কাছ থেকে:
‘‘আমরা ছিলাম গেরিলা– মরব না কিন্তু মারব, এইটাই হইল নির্দেশ। রাতেই বেশি আক্রমণ করতাম। নানা বেশে রেইকি করতাম। কখনও দিনমজুর, কখনও ভিক্ষুক সাইজা। রেইকি আইসা বলত, নির্দেশ দিত কীভাবে যাইতে হবে সেই বিষয়ে। মাইন বিস্ফোরণ কইরা আমরা সইরা পড়তাম। ওরা টেরও পাইত না। মৃত্যুভয় ছিল না গেরিলাদের।’’
১৯৭১ সালে এক সম্মুখযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে চাঁনমিয়ার বাম হাতের কনুইয়ের হাড় গুঁড়ো হয়ে যায়। কোমরে বিদ্ধ হয় চারটি গুলি। গুলি লাগে ডান হাঁটুর নিচের দিকেও। পরবর্তীতে তাঁর বাম হাতে কৃত্রিম বন স্ক্রু দিয়ে লাগিয়ে দেওয়া হয়। হাতটা টিকে গেলেও ওটি সারাজীবনের জন্য অকেজো হয়ে যায়। ফলে স্বাধীনতার পর জীবিকার জন্য তেমন কোনো কাজই করতে পারেননি এই গেরিলা। অভাব-অনটনের মাঝেও ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হয়েছে তাঁকে। জীবনযুদ্ধের কথা বলতে গিয়ে আবেগে চোখ ভেজান এই যোদ্ধা। আমরা তখন নিরব থাকি। খানিক পরেই জানতে চাই রক্তাক্ত সে দিনটির কথা।
‘‘৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১। আমরা ছিলাম গোল্লার চর ক্যাম্পে। নদীর ওই পারেই ফুলছড়ি থানা। সেখানে রেইকি করতে যায় আমাদের কয়েকজন। থানায় ছিল রাজাকাররা। তারা হাতিয়ারসহ রাজাকারদের আটক করে। থানায় কোনো পাকিস্তানি নাই, এই খবর পাঠাইয়া দেয় আমাদের ক্যাম্পে।
বিকালের দিকে আমরা নদী পার হইয়া ফুলছড়ি বাজারে আসি। রুস্তম ভাই ছিলেন কমান্ডে। আমাদের উদ্দেশ্য ফুলছড়ি থানায় ক্যাম্প বসানো। কিন্তু সেইখানে পাকিস্তানি সেনাদের তিনটা গাড়ি হঠাৎ আমাদের মুখোমুখি হয়ে যায়। আমরা তখন দুইপাশের ধানক্ষেতে পজিশন নিয়াই ফায়ার ওপেন করি। ওরা টিকতে পারে না, গাড়ি ও গোলাবারুদ রাইখাই পিছু হটে। আমরা ওদের দাবড়াইয়া নিয়া যাই। পাবলিক ধারালো অস্ত্র ও লাটিসোটা নিয়া আমাদের সাথে যোগ দেয়। আমরা পাকিস্তানিদের দুই-তিন মাইল দূরে নিয়া যাই। কিন্তু সন্ধ্যা হইলে ওরা অন্ধকারে পালায়। তখন নিরাপদ মনে কইরা আমরা ওই পথেই ফেরার সিদ্ধান্ত নেই। এর আগেই পাকসেনারা ওয়ারলেসে খবর পাঠায় গাইবান্ধায়, পাকিস্তানি ক্যাম্পে। সেখান থেইকা সেনারা আইসা পজিশন নেয় ওয়াবদা বাঁধের দুইপাশে।
রাত তখন ৮ টার মতো। আমাদের ১ নং ও ২ নং পাল্টুন ওই পথে আসতেই পাকসেনারা বইলা ওঠে, ‘হ্যান্ডস আপ’। ওরা ভাবছিল ওদের সেনারাই ফিরছে। আমার ভাবছি আমাদেরই অন্য কোনো গ্রুপ। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কমান্ডার পাসওয়ার্ড বইলা দেয়। পাকিস্তানি সেনারা তখনই বইলা ওঠে, ‘ইয়ে তো মুক্তি চিজ হ্যায়’। শুরু হয় গোলাগুলি।
আমি ওয়াবদা বাঁধের দক্ষিণ পাশে শুইয়া পজিশন নিব, অমনি এক পাকিস্তানি সেনা আমার কাছে আইসা রাইফেলে পাড়া দেয়। তারপর খুব কাছ থেইকা বেশ কয়টা ফায়ার করে আমার হাতে, কোমরে ও পায়ে। ওই অবস্থায় আমি ঝাঁপ দেই নদীতে। নদীর ওইপারে পজিশনে ছিল আমাদের আরেকটি প্লাটুন। আমার হাতে তখন বোধ নাই। বাঁইচা থাকব কিনা জানি না। সাঁতরাইয়া ওইপারে যাই। কীভাবে পারছি, জানি না। আল্লাহই হয়তো রক্ষা করছেন। আবদুল্লাহ নামে এক সহযোদ্ধা দূর থাইকা আমারে রক্তাক্ত অবস্থায় দেইখা ‘চাঁনভাই’ বইলা আগাইয়া আসে। এরপর আর কিছু মনে নাই।
আমাকে প্রথমে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয় হেডকোয়ার্টার গোল্লার চরে। পরে পাঠানো হয় ভারতের তুরাতে। ওই অপারেশনে আমাদের রেইকির সংবাদটা ভুল ছিল। তাই আমরা সোবহান, আফজাল,কাবেজ আলী, বাদল, মেলাসহ ৬-৭ জন সহযোদ্ধারে হারাই।’’
মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় অমুক্তিযোদ্ধার নাম আসা প্রসঙ্গে চাঁনমিয়া অকপটে তুলে ধরেন নিজের মতামত:
‘‘আমরাই করছি এইটা। মুক্তিযোদ্ধারাই দায়ী। প্রথম দায়ী থানা কমান্ড। তারপর কল্যাণ ট্রাস্ট ও মন্ত্রণালয়। থানা কমান্ড টাকা খাইয়া এই অপকর্ম করছে। এখন সরকার যে উদ্যোগ নিছে এইটা অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল।’’
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর জিয়াউর রহমান এসে দালাল আইন বাতিল করেন। রাজাকারদের স্বাধীন দেশে রাজনীতি করার বৈধতা দেন তিনি। তার সরকার ও পরবর্তীতে তার দলের হাত ধরেই মন্ত্রী হন বড় বড় রাজাকাররা। স্বাধীন দেশের পতাকা উড়ে রাজাকারদের গাড়িতে। চাঁনমিয়া তখন প্রতিবাদস্বরূপ উপেক্ষা করেন বঙ্গভবনে যাওয়ার দাওয়াত। তাঁর ভাষায়:
‘‘তখন মইরা যাইতে ইচ্ছা করত। পতাকা উড়ছে রাজাকারের গাড়িতে। মানতে পারতাম না। আমারে যদি কোটি টাকা দেন তবুও তো রাজাকারের সাথে হাত মিলামু না। জিয়া যদি সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধা হইত, তাইলে এমন ঘৃণ্য কাজ করতে পারত না।’
দেশের কোন জিনিসটি দেখলে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভালো লাগে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন:
‘‘দেশ তো সুন্দরভাবে চলা শুরু করছে। আমার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তাঘাট হইতেছে। অথচ আমার বাপ-দাদা চৌদ্দগুষ্টি তো কাদার মধ্যে হাঁটছে। রাস্তা পাকা হইছে। আমার চৌদ্দগুষ্টি বিদুৎ দেহে নাই। আমার বাড়িতে এহন বিদ্যুৎ। এইটাই আমার গর্ব। দেশ স্বাধীন না হইলে এইটা কি হইত?’’
খারাপ লাগার কথাও বললেন তিনি। রাজনীতির নামে সাধারণ জনগণকে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। বাসে কি এমপি, মন্ত্রী আর রাজনৈতিক নেতারা কেউ চলাফেরা করেন? প্রশ্ন রাখেন চাঁনমিয়া। তাই সে সবে পেট্রোল বোমা মারা হয়েছে। এই রাজনীতি তো আগে ছিল না। পাকিস্তানিরাও এভাবে মানুষ পুড়িয়ে মারেনি। ওদের পাকিস্তানি সেনাদের চেয়েও বর্বর বলে মনে করেন এই ত্যাগী মুক্তিযোদ্ধা।
কী করলে দেশ এগিয়ে যাবে এ প্রশ্নে তাঁর মত, গ্রাম পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা আদর্শের লোকদের এক করে দেশের কাজে লাগানো দরকার। পরিবর্তনটা আনতে হবে গ্রাম থেকেই। দলীয় বা অদলীয় নয়, যারা অন্যায় করবে তাদেরই বিচার করতে হবে। ছাড় দেওয়া যাবে না। চোর তো চোরই।
যুদ্ধাহতের ভাতা দিয়েই চলছে মুক্তিযোদ্ধা চাঁনমিয়ার পরিবার। তবুও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কোনো চাওয়া আছে কিনা জানতে চাই আমরা। তাঁর কথা হল:
‘‘দেশটা স্বাধীন করছি। পতাকা আনছি। সরকার আমাদের আর কী দিবে? এই হাতটা কি ফিরায়ে আইনা দিতে পারবে! আমরা বাঙালি জাতির ভালো ও সুন্দর থাকার স্বপ্ন নিয়া যুদ্ধে গেছিলাম। সেইটা পাইছি। এইটাই বড় পাওয়া।’’
দেশকেই ওপরে রাখলেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা চাঁনমিয়া। এড়িয়ে গেলেন ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার কথা। কিন্তু তাঁর মেয়ে মোছাম্মৎ কণা খাতুনের কথায় আমরা স্থির হয়ে যাই। বুকের গভীর ক্ষত চেপে রাখতে না পেরে তিনি জানালেন, তিনি অনার্স করেছেন খুব কষ্ট করে। রংপুরে মেসে থেকে পড়াশোনা করতেন। কোনো কোনো মাসে মাত্র ১ হাজার টাকা দিয়ে চলেছেন। তখন হাত পেতেছেন স্বজনদের কাছে। এখন চাকরি পাচ্ছেন না। বিভিন্ন জায়গায় মুক্তিযোদ্ধার কোটায় আবেদন করেছেন। কিন্তু তার চাকরি কেন যেন হয় না।
বাবার প্রতি কোনো অভিমান নেই কণার। সব অভিমান সরকারের ওপর: ‘‘কেন আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হলাম। কোথায় আমরা অধিকার পেলাম?’’
পরবর্তী প্রজন্ম সাফল্যের আকাশ ছুঁবে, বাংলাদেশের সোনার ছেলেরা একদিন ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয় করবে, এমনটাই আশা মুক্তিযোদ্ধা চাঁনমিয়া সরদারের। তাদের উদ্দেশে তিনি শুধু বললেন:
‘‘তোমরা দেশের স্বার্থে কাজ কর। নিজেদের শিক্ষিত করে তোল। অন্যায়ে প্রশ্রয় দিও না। মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগকারীদের স্মরণ কর। মনে রেখ, মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির সবচেয়ে বড় অর্জন।’’
লিখাটি প্রকাশিত হয়েছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কমে, প্রকাশকাল: এপ্রিল ২৬, ২০১৫
WARNING :
WWW.SALEKKHOKON.ME-এ প্রকাশিত কোনও তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে
© 2015 – 2018, https:.